স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সোমবার জানিয়েছে, ৫০টি জেলায় ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছে।
বিভিন্ন জেলায় আক্রান্তদের অনেকে ঢাকা থেকে রোগ নিয়ে গেছেন। তবে রাজধানীর বাইরেও এডিস মশার বিচরণ রয়েছে বলে স্থানীয় পর্যায়ে আক্রান্তের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
ঢাকায় এডিস এজিপ্টি মশাই প্রধানত ডেঙ্গুর বাহক; তবে ঢাকার বাইরে থাকা এডিস এলবোপিকটাস মশাও ডেঙ্গু রোগের কারণ হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইইডিসিআরের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক ডা. এ এস এম আলমগীর।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এডিস এলবোপিকটাস মশাও ডেঙ্গুর কারণ হতে পারে। আর এই মশাটি ঢাকার বাইরের অঞ্চলগুলোতে রয়েছে।”
সুতরাং এই মশার (এডিস এলবোপিকটাস) কোনটি যদি ঢাকা থেকে যাওয়া কোনো ডেঙ্গু রোগীকে কামড় দেয়, তবে ওই এলাকায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়তে পারে,” বলেন তিনি।
অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় (রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা) এক হাজার ৯৬ জন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ৮২৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল।
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বছরের শুরু থেকে সোমবার পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৩ হাজার ৬৩৭ জন ডেঙ্গু রোগী। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন তিন হাজার ৮৪৭ জন। এ সময়ের মধ্যে হাসপাতাল থেকে নয় হাজার ৭৮২ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন বলে জানাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
গত ২৪ ঘণ্টায় শুধু ঢাকার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেই ভর্তি হয়েছে ৮৫৬ জন ডেঙ্গু রোগী। সবচেয়ে বেশি ১২৫ জন ভর্তি হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
এছাড়া রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে আরও ২৬৫ জন ডেঙ্গু রোগী গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ২৫ জনের বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে এলেও সরকারি হিসাবে এখনও মৃতের সংখ্যা আটজন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে মিটফোর্ডে ১১৩, শিশু হাসপাতালে ৩৪, সোহরাওয়ার্দীতে ৪৮, হলি ফ্যামিলিতে ৪১, বারডেমে ২৩, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৭, পুলিশ হাসপাতালে ২১, মুগদা মেডিকেলে ৬০, বিজিবি হাসপাতালে ১০ এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৭৯ ডেঙ্গু রোগী গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে।
একই সময়ে রাজধানীর বাইরে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় মোট এক হাজার ২৮৩ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি আছে ৫৩১ জন।
তীব্র জ্বর, মাথা ব্যথা ও মাংসপেশিতে ব্যথা, শরীরে লালচে দানা ইত্যাদি ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ হলেও এবার এর ব্যতিক্রম পাওয়া যাচ্ছে।
জ্বর হলে কাছের হাসপাতালে কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রক্তের পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়েছে সরকার।
চিকিৎসকরা জ্বরে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি রোগীকে বেশি বেশি তরল খাবার খাওয়াতে বলেছেন।
এবার ডেঙ্গুজ্বরে রক্তের ঘনত্ব কমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দেওয়ায় আক্রান্তের রক্তচাপ কমে যাচ্ছে কি না, তা নিয়মিত পরীক্ষা করতে বলা হচ্ছে।
জ্বর ভালো হওয়ার পরও ডেঙ্গুজনিত মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করছেন চিকিৎসকরা।
এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় তা প্রতিরোধে বাড়ির আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখতে বলা হচ্ছে।
অফিস, ঘর ও আশপাশে যে কোনো পাত্রে (এসির ট্রে/ফুলের টব) জমে থাকা পানি তিন দিনের মধ্যে পরিবর্তন করতে পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
এডিস মশা সাধারণত দিনের বেলা কামড়ায় বলে দিনে ঘুমানোর ক্ষেত্রেও মশারি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।